তো তেমনই সমীরণদা, উমাদার পর তৃতীয় সংখ্যায় সম্পাদনার দায়িত্ব ছিল আমার। বিষয় – ডুবুরি :: তিনটে দিয়ে দেওয়া গদ্য থেকে কবিদের লিখতে হবে তিন বা ততোধিক কবিতা। কীরকম? গদ্যকে কবিতা ফর্মে লিখে দেওয়া অবশ্যই নয়। একেকটা গদ্য থেকে একেকটা কবিতা, সেরকমও কোনো ম্যাপিং করা ছিল না। খালি অনুরোধ ছিল, তিনটে গদ্য প’ড়ে যে কবিতা মাথায় আসবে, সেগুলো লিখে পাঠানোর।
গদ্য থেকে কবিতা কী ক’রে? আপাতভাবে দুটো আলাদা ফর্মের আদানপ্রদান নতুন নয়, কিন্তু কীভাবে ঘটে তা? উত্তর হল, যেভাবে আমাদের চোখের সামনে, অস্তিত্বে, অনুভবে একের মধ্যে আরেক মুহূর্তের স্তর মিশে থাকে, তেমনই এরাও। ধরা যাক, কারো বাড়ি নৈশভোজের পার্টিতে শখ ক’রে মুর্গি আনা হয়েছে। এনেছে তো কয়েক কিলো মৃত মাংস, কিন্তু তার সঙ্গে চ’লে এসছে মুর্গিটির মৃত জীবন — কোডেড অবস্থায়। অগুন্তি জিন, ডিএনএ... আর তার মধ্যে কয়েক হাজার বছরের আলো বাতাস মাটি — বর্তমানে তাতে মিশছে নুন হলুদ টম্যাটো পিঁয়াজ... তৈরি হচ্ছে নতুন মুহূর্তের নতুন সত্যি। এবার ধরা যাক, খাওয়ার সময় কথা বলতে গিয়ে কারো মুখ থেকে একটু ঝোল মাখা লালা ঝ’রে পড়ল টেবিলে, আর সাথে সাথেই সুতির কাপড় দিয়ে সাফ ক’রে দেওয়া হল তা। তো এই, উচ্চারণের চাকলা নিয়ে খ’সে পড়া লালা, সুতোর মিহি রোঁয়া, কয়েক হাজার বছর আগে কোনো বনমোরগের শারীরিক বিকৃতি সব কিন্তু একসাথে মিলে-মিশে কোথাও একটা রয়ে গেল, এই মহাবিশ্বেই। তেমনই কোনো একটি মাধ্যমে বানানো শিল্পের মধ্যে মিশে থাকে হাজার-হাজার অন্য মাধ্যমের কোষ... কাজটা শুধু তাদের ডাকগুলোকে চেনার। আর তখনই টের পাওয়া যায় গদ্যের মধ্যে কবিতার, কবিতার মধ্যে ছবির উড়তে থাকা আঁশেদের।
এই সংখ্যার জন্য যাঁদের থেকে বাছাই গদ্য চাওয়া হয়েছিল, কবিতা চাওয়া হয়েছিল, তাঁদের সবারই সহযোগিতা পাওয়া গেছে — আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা কৃতজ্ঞ, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ-শিল্পী সৌম্যেন্দ্র নাথ মণ্ডলের কাছেও। পাঠকের জন্য রইল এই আয়োজন। পরের সংখ্যায় আবার রেহেলকে দেখা যাবে অন্য কোনো পথে, অন্য অভিমুখে। শুরুতে ‘যাযাবর’ শব্দটা ব্যবহার করার পর থেকেই একটা কথা মনে বড় চুলকোচ্ছে — যাযাবর কিন্তু একবার চ’লে আসা রাস্তা দিয়ে আবার একসময় ফেরে, বছর-আগের ফেলে রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো এসে দেখে। রেহেলও কি কোনোদিন ফিরবে এই পথ দিয়ে?